জীবনের অপর পৃষ্ঠা (পর্ব-৫৩)

লেখক – কামদেব

[তিপ্পান্ন]
—————————

           রতির যা বয়স তাকে ছেলে মানুষ বলা যায়না।বয়স হলেও বাচপনা যায়নি।খুশবন্ত ভাত রান্না করবে ভেবেছিল এখন ভাবছে চাপাটি করবে।সেই ঘটনার পর  আম্মি বিয়ের জন্য তাগাদা দিত,মেয়ের জন্য মায়ের দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক।কিন্তু ওদের ব্যবহার নারীত্বের প্রতি আঘাত মনে হয়েছে।নিছক নারী হতে বেরিয়ে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে  বিয়ের চেয়ে নিজের কেরিয়ারকেই গুরুত্ব দিয়েছিল।আজ তাকে নিয়ে সবাই তটস্থ।  রতিকে বিয়ে করে মনে হল একটা খেলার সাথী পাওয়া গেল।খেলখুদ তার খুব পছন্দ।ভেজিটেবল স্যাণ্ড উইচ করে এক ফ্লাক্স চা নিয়ে রতির কাছে গেল।ঘরে ঢুকে দেখল সকালের কাগজ নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছে।প্লেটে স্যাণ্ড উইচ এগিয়ে দিয়ে পাশে বসল।রতির মুখে লাজুক হাসি।
ভ্রু কুচকে তাকালো খুশবন্ত।রতি কাগজটা এগিয়ে দিয়ে একটা জায়গা দেখিয়ে দিল।খুশবন্ত কাগজ নিয়ে এটা ওটা দেখতে দেখতে এক জায়গায় নজর আটকে যায়।শারদীয়া পত্রিকার পর্যালোচনা বেরিয়েছে।বিভিন্ন পত্রিকায় কি কি লেখা আছে কোন লেখা উল্লেখযোগ্য ইত্যাদি।সন্দীপন পত্রিকা সম্পর্কে লিখেছে এক নতুন লেখকের কথা,রত্নাকর সোম।খুশবন্ত ভাল করে পড়ে।সম্ভাবনাময় লেখক,….পাঠককে দর্পণের সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে….পত্রিকাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে ইত্যাদি।এতক্ষন এইসব মন দিয়ে পড়ছিল।খুশবন্ত ভাবে এইসব পড়ে রতির মনে যেন কোনোভাবে আত্মসন্তুষ্টির মনোভাব না জন্মায়।তা হলে ওর মনের ক্ষিধেটা নষ্ট হয়ে যাবে।খুশবন্ত কাগজটা অবজ্ঞাভরে সরিয়ে রাখল। লক্ষ্য করল রতির ভাল লাগেনি।স্যাণ্ডউইচ শেষ করে বলল,চা দাও।
ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিয়ে খুশবন্ত বলল,কোন পত্রিকা কি লিখলো তার চেয়ে বড় কথা পাঠক কিভাবে নিয়েছে।
–এই সমালোচনা ফালতু?
–আমি তাই বললাম?কেউ সফল হলে কার বেশি আনন্দ হবে?
রত্নাকর বুঝতে পারে না খুশীর কথা।
খুশবন্ত বলল,মায়ের চেয়ে বেশি আপন কেউ নেই।
রতির মন খারাপ হয়,মায়ের কথা মনে পড়ে।তাকে নিয়ে কত চিন্তা ছিল।খুশবন্ত বলল, আজ আণ্টি নেই।আজ সবচেয়ে কে খুশী হবে?
রতি হেসে বলল,মুন্নি।
–লোকে পত্রিকা কেনে বিশেষ কোনো লেখক দেখে নয়।একটা পত্রিকায় অনেকের লেখা থাকে।কিন্তু বই কেনে বিশেষ লেখকের লেখা পড়ার জন্য।
–থাক আর বলতে হবেনা,সমজ গিয়া।রতি বলল।
খিল খিল করে হেসে উঠল খুশবন্ত।হাসি থামলে রতি বলল,সকাল থেকে একটা কথা ভাবছি।আচ্ছা আমরা পাড়ায় যাবো এক সঙ্গে না আলাদা আলাদা?
–আলাদা আলাদা কেন?
–এক সঙ্গে গেলে ওরা যদি সন্দেহ করে?তুমি তো ওদের চেনো না?
–কি সন্দেহ করবে?আমরা একসঙ্গে যাবো–হাজব্যাণ্ড-ওয়াইফ।
–হাজব্যাণ্ড-ওয়াইফ?রতির চোখ গোল হয়।
–কেন আমাকে ওয়াইফ বলতে লজ্জা করছে?
–ধ্যৎ তুমি আমার সোনা মনা।রতি আচমকা জড়িয়ে ধরল খুশবন্তকে।ওদের সামনে তোমাকে মুন্নি বলতে পারব না।
–তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই বলবে।যাই রান্না করিগে।
–আর একটা কথা,তুমি ওখানে কি পরে যাবে?
–তুমি বলো।
–পুলিশের পোশাক পুজোর সময় ভাল লাগেনা,তুমি সালোয়ার কামিজ পরবে।
–ঠিক আছে তাই পরবো।আর কিছু?
রতি বোকার মত হাসল।খুশবন্ত বলল,আমার অনেক কাজ পড়ে আছে,জানকি নেই।
–আমি হেল্প করবো?
খুশবন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,তুমি নিজের কাজ করলেই খুশী হবো।

পুরোহিত মশাই পুজো শুরু করে দিয়েছে।পল্টু মাইকে ঘোষণা করছে সকাল সাড়ে-নটায় অঞ্জলি শুরু হবে।যারা অঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক মণ্ডপে চলে আসুন।বেলাবৌদি হন্তদন্ত হয়ে কাকে খুজছে।উশ্রীকে দেখে জিজ্ঞেস করল,উমা কোথায়?
মনীষাকে আসতে দেখে বলল,ঐ তো দিদি আসছে দিদি বলতে পারবে ওর খবর।উশ্রীর কথায় অভিমানের সুর।
বেলা চৌধূরি এগিয়ে গিয়ে মনীষাকে হাতে ধরা শারদীয়া পত্রিকাটা দেখালো।মনীষা এক পলক দেখে বলল,আমাদের রতি?
–ও ছাড়া কে হবে?এমন অদ্ভুত নাম কটা আছে?
–তুমি কি যে বলনা,রত্নাকর খারাপ কি?পড়েছো?
–পড়েছি বলেই বলছি এ রতি ছাড়া কেউ নয়।কিছু কিছু চরিত্র হুবহু আমার চেনা।
–তোমার হলে আমাকে দিও।দেখব কি লিখেছে।
–সে না হয় দেব।আমি ভাবছি ছেলেটার কথা।পাড়ার কথা একেবারে ভুলে গেছে?আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো উমা ওকে কত ভালবাসতো?
মনীষা বলল,জানো বেলাদি রতি একদিন আমাকে বলেছিল বৌদি দূর থেকে দেখে কোনো কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।কি জানি কেন আসেনি।যাক আমাদের আর থানা পুলিশ করতে হবেনা।
–শোনো মণীষা রতিকে আমি কম ভালবাসিনা।সেজন্যই রাগ হচ্ছে তোর একবার ইচ্ছে হলনা পাড়ায় কি হচ্ছে?লেখক হয়ে সব ভুলে যেতে হবে?
বঙ্কা চিৎকার করে,বৌদি আসুন অঞ্জলি শুরু হচ্ছে।
–শুরু করে দে।আমরা পরেরবার দেবো।উমা থাকলে পাঠিয়ে দেতো।বেলা গলা চড়িয়েই বলল।
মণ্ডপে দাড়াবার জায়গা নেই।একদিকে মেয়েরা আরেক দিকে ছেলেরা দাঁড়িয়ে গেছে।শরদিন্দু ব্যানার্জিকে দেখে কমলেশবাবু ডাকলেন,আসুন ডাক্তার বাবু।সোমলতা মায়ের সঙ্গে মেয়েদের দিকে চলে গেল।পারমিতা আড়চোখে দেখে ভীড় থেকে বেরিয়ে গেল।পরেরবার দেবে এই ভীড়ে ভাল করে শুনতে পাওয়া যায়না।ভুলভাল মন্ত্র উচ্চারণ করে দেওয়ার থেকে অঞ্জলি না দেওয়াই ভাল।
শুভ চায়ের ভাড় হাতে নিয়ে মণ্ডপের দিকে আসছে,পিছনে দেবযানী আণ্টি সঙ্গে মেয়ে রোজি।হিমেশ মণ্ডপে দাঁড়িয়ে শুভকে দেখে বলল,কিরে চা খাচ্ছিস অঞ্জলি দিবি না?
–তোরা দে আমার অত পুণ্যের দরকার নেই।শুভ বলল।
–কেন অঞ্জলি দেবে না কেন?শুভ ঘাড় ঘুরিয়ে দেবযানী আণ্টিকে দেখে ভাড় ফেলে দিল।রোজি ফিক করে হেসে ফেলে।দেবযানী আণ্টি বলল,চা খেলে দোষ নেই তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো।
শুভ রোজির দিকে চোখ পাকিয়ে হাত ধুতে চলে গেল।বঙ্কা কোথা থেকে এসে বলল,কিরে শ্বাশুড়ি দাবড়ি দিয়েছে?
–এবার তোকে থাবড়া দেবো।
পারমিতাকে বেরিয়ে আসতে দেখে সঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,কিরে চলে এলি?অঞ্জলি দিবি না?
–পরের বার দেব,এত ভীড়।ফাটুসটাকে দেখেছিস?বাপ মায়ের গুডি গাল।
–সোমলতার কথা বলছিস?ওই জন্য বেরিয়ে এলি?সঞ্জনা জিজ্ঞেস করে।
–কেন ওর জন্য কেন?পুজো কি ওর একার?এতদিন খেলিয়ে এখন এক ডাক্তারের সঙ্গে নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।
সুলতাকে আসতে দেখে সঞ্জনা বলল,ওই দেখ খবরি আসছে।দেখ কি নতুন খবর নিয়ে আসছে।
পাড়ার সব খবর সুলতার নখ দর্পনে অবশ্য তার অর্ধেকই ভুল খবর।বন্ধু মহলে সবাই ওকে বলে খবরি,অবশ্য প্রকাশ্যে নয়।সুলতার মুখকে সবাই ভয় পায়।সুলতা এসেই বলল, রাতে হেভি জমবে।
–জমবে মানে?
–হেভি নাচানাচি হবে।বাইরে থেকে একটা ছেলে আসছে হেভি নাচে।
–তোকে কে বলল বঙ্কিম?
–সঞ্জনা আমার সঙ্গে লাগতে আসিস না,সুলতা ভালর ভাল মন্দের মন্দ।
–আচ্ছা পারু তুই বল,আমি খারাপ কিছু বলেছি?
–তুই বঙ্কিমের কথা বলিস নি?একদম কথা ঘোরাবি না।
–হ্যা তাতে হয়েছে কি?
–দেখ সঞ্জনা সবাই ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না।তুই ওর কথা কেন বললি?আমি কি সুদীপের কথা বলেছি?পারু তুই বল তনু কেন সুদীপকে ফুটিয়ে দিল বলেছি?
–মোটেই না ঐ তনুকে ফুটিয়ে দিয়েছে।
দূরে বঙ্কাকে দেখে পারমিতা বলল,এই মনে হয় তোকে ডাকছে।
–ডাকুক,ডাকলেই যেতে হবে নাকি?সুলতা চলে গেল।
সুলতাকে দেখে বঙ্কা গলির দিকে হাটতে লাগল।সুলতা একবার পিছন ফিরে ওদের দেখে গলিতে ঢুকে গেল।
পারমিতা সঞ্জনা চোখাচুখি করে হাসল।বঙ্কা গলিতে ঢুকে কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
সুলতা এসে বলল,কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
–ওদের সঙ্গে কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?
–সুদীপের নতুন লাভারের কথা বলছো?
–কে কার লাভার তোমার তাতে কি?
–এইজন্য ডেকেছো?উষ্ণ গলায় বলল সুলতা।
–কি মুস্কিল তোমার সঙ্গে দেখছি কথা বলাই যাবেনা।
–কথা বোলনা।কে তোমায় মাথার দিব্যি দিয়েছে?
–তুমি আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করো কেন বলতো?
সুলতা ফিক করে হেসে বলল,একটু বাজিয়ে দেখলাম।কি বলছিলে বলো?
–না কিছুনা।
–সঞ্জনা খুব বাড় বেড়েছে।আমি বলে দিয়েছি তোমাকে নিয়ে বললে আমি ছাড়বো না।
–আঃ কি হচ্ছে কি?পুজোপালির মধ্যে কি দরকার ঝামেলা করার?
–ঝামেলা আমি করছি?
বঙ্কা অবস্থা সামাল দিতে বলল,মনে হচ্ছে অঞ্জলি শেষ হল।
–এ্যাই আমি যাই।সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি,এই ব্যাচে নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।কিছুটা গিয়ে পিছন ফিরে বলল,রাতে দেখা হবে?
–কিছু খাওনি তাহলে একবার খাও।বঙ্কা ঠোট সুচালো করে ধরল।
সুলতা খিল খিল হেসে বলল,আহা অঞ্জলি দেবো না।

সুলতার বঙ্কা নামটা পছন্দ নয়।এই নামের জন্য ওকে কেউ পাত্তা দেয়নি। সুদীপ শুভ কি সুন্দর নাম তা না বঙ্কিম। ও বলছিল বঙ্কিম চন্দ্র সাহিত্য সম্রাট।কিসে আর কিসে চাঁদে আর পাদে।আপন মনে হাসে সুলতা।তা হলেও বঙ্কিমকে ভাল লাগে সুলতার,বেশ মজার মজার কথা বলে।তনুর মত ও কোনোদিন ওকে দাগা দেবেনা।মাঝে মাঝে একটু খেলায়,যখন “কথা বলতে হবেনা” বলল ওর মুখের চেহারাটা দেখে খুব মজা লেগেছিল।অসভ্যটা রাস্তার মাঝে চুমু খেতে বলছে।
অঞ্জলি শেষ হয়ে আরেক দফা শুরু হতে চলেছে।এবারের ব্যাচে মেয়েরাই বেশি।দেবযানী আণ্টি আগেরবার দিতে পারেনি,এবার দেবে।শুভ ছেলেদের দিকে দাড়িয়ে,  মনে হয় প্রতিমা সামনে নয় ওর বা-দিকে।বারবার ঘুরে বা-দিকে রোজিকে দেখছে।
রান্না শেষ করে খুশবন্ত স্নানে গেল।দরজা বন্ধ করে নিজেকে উলঙ্গ করল।গায়ে সাবান ঘষতে ঘষতে তলপেটের নীচে নজর যেতে রাতের কথা মনে পড়ল।রতি ছেটে দিয়েছে।একেবারে কামিয়ে দিতে চেয়েছিল  খুশবন্তের ভাল লাগেনা।মনে হয় কেমন নেড়া-নেড়া।
ঝাট জায়গাটা মিস্টেরিয়াস করে। এটুকু থাকলে অসুবিধে কোথায়?ভিতরটা কেমন লাগছে।প্রথমবার বলেই হয়তো।আম্মিকে এখনই কিছু বলার দরকার নেই।রইয়ে সইয়ে বলতে হবে।রতির বইটা প্রকাশ হলে একটু নাম হবে তখন হয়তো অতটা আপত্তি করবে না।খাও-পিও জিন্দেগি  তার ভাল লাগেনা।যাদের ভগবান অঢেল টাকা দিয়েছে তাদের দিল দেয়নি।পুলিশগিরি করতে করতে নারীত্ব হারিয়ে ফেলেছিল রাতে পেয়েছে সেই নারীত্বের স্বাদ।এই সময় জানকি থাকলে ভাল হতো।ও আর ফিরবে মনে হয়না।ফিরলেও কি দার্জিলিং যেতে রাজী হবে? রতির টাকা জানকিই নিয়েছে।ও যদি না নিত তাহলে নিজের বেতন না নিয়ে যাবে কেন?এতগুলো টাকা অথচ রতি কেমন নির্বিকার।এই জন্য ওকে ভাল লাগে।
খাবার টেবিলে রুটি দেখে রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,এটা কি?
–আলু কুলচা বলি আমরা।বক বক না করে খেয়ে দেখো ভাল না লাগলে খাওয়ার দরকার নেই।খুসবন্ত বলল।
সারাদিন খেটে সব বানিয়েছে আর ক্ষেপানো ঠিক হবেনা।রত্নাকর মুখ বুজে খেতে লাগল।কুলচা না কি খেতে দারুন হয়েছে।এক সময় আদিবাসীদের খাবার খেয়েছে এবার তাকে পাঞ্জাবী খানায় অভ্যস্থ হতে হবে।
–লেখা শুরু করেছো?
–হুউম।
–আমি আছি?
–তোমাকে তো বাদ দিতে পারব না,তবে তুমি এখানে বাঙালী।
–সে কি পুলিশে কাজ করে?
–না।একটা এনজিও মানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।একটা সমস্যা ছিল,মিটে গেছে।
–সমস্যা?
–খ-দিয়ে বাংলায় ভাল নাম পাচ্ছিলাম।তুমি মুন্নি বলতে ম-দিয়ে সুন্দর নাম দিয়েছি।
–কি নাম?
রত্নাকর গভীর দৃষ্টি মেলে খুশবন্তকে দেখে। খুশবন্ত খাবারে মন দেয় জিজ্ঞেস করে,আর একটা রুটি দিই?
–দেও।নাম দিয়েছি মেঘমায়া সেন।দুর দুরান্ত হতে অমৃত বয়ে এনে মা যেমন সন্তানকে–।
মা যেমন সন্তানকে কথাটায় খুশবন্ত আরক্তিম হয় রুটি এগিয়ে দিয়ে বলল,আর বলতে হবেনা। চুপ করে খাও।শুরু করলে থামতে পারেনা।
শারদীয়া সন্দীপন-এ রতির লেখা বেরিয়েছে বিষয়টা পরিচিত মহলে ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে।বেলা চৌধুরি ছাড়া কারো কাছে সন্দীপনের কপি নেই।মনীষা ঘোষ আগেই চেয়ে রেখেছে।দুপুরবেলা আরেকবার রতির উপন্যাসটা পড়া শুরু করল।সোমলতার সঙ্গে সুচির কিছুটা মিলছে মিল পেলেও দেবের সঙ্গে কাউকে মেলাতে পারে না।অথচ পড়তে পড়তে মনে হয় বিষয়টা ছোওয়া যায় কিন্তু ধরা যায়না।শরীরে কেমন অস্বস্তি হয়।
খুশবন্ত শুয়ে পড়েছে পাশে রতি শুয়ে শুয়ে বই পড়ে।দুপুরে ঘুমায় না রতি।একসময় পাশ ফিরে খুশবন্ত হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পা-টা পেটের উপর তুলে দিল।লুঙ্গি উরু পর্যন্ত উঠে গেছে।আড়চোখে দেখল মুন্নি ঘুমোচ্ছে।রতি বইটা মাথার কাছে সরিয়ে রাখল।একবার ভাবল পা-টা ধরে নামিয়ে দেবে আবার মনে হল মুন্নির যদি এভাবে শুতে ভাল লাগে তাহলে থাক।পায়ের উপর হাত বোলায় রতি।পায়ের গুলিতে মৃদু চাপ দিল।পা-টা আরও চেপে বসে।মনে হয় মুন্নির ভাল লাগছে।রতি টিপতে টিপতে আরো উপরে উঠতে থাকে।উরুর নরম মাংসে চাপ দেয়।হাত দিয়ে আরো জোরে চেপে ধরল।রতির মজা লাগে।খুশবন্তের মুখ রতির গলার কাছে।উষ্ণ নিশ্বাস লাগছে গলায়।রতি দু-হাতে মুন্নির উরু টিপতে লাগল।
তন্দ্রা জড়িত গলায় মুন্নি বলল,কি করছো?
–তুমি ঘুমোও নি?
–এভাবে কি ঘুমানো যায়?
–তোমার ভাল লাগছে না?
–হু-হু-ম।
রতি উৎসাহিত হয়ে লুঙ্গি কোমরে তুলে আরো জোরে জোরে টিপতে লাগল।মুন্নি চিত হয়ে অন্য পা এগিয়ে দিল।রতি উঠে বসে দুটো পা ম্যাসাজ করতে থাকে।প্যাণ্টি ধরে নীচে টানতে একটা হাত এসে হাত চেপে ধরে বলল,ন-না এখন নয়।
রতি বুঝতে পারে মুন্নি ঘুমায়নি।লুঙ্গি হতে হাত সরিয়ে বুকে উঠে ঠোটে ঠোট রাখল।খুশবন্ত ডান হাতে গলা জড়িয়ে বা-হাত দিয়ে মাথার চুলে বোলাতে থাকে।রতি জিজ্ঞেস করল,মুন্নি তুমি আমাকে ছেড়ে যাবেনা তো?
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?খুশবন্ত অবাক হয়।হেসে বলল,আমি তোমাকে এইভাবে জড়িয়ে রাখবো যাতে তুমি হারিয়ে না যাও।
রতি হাসলো।খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে হাসছো কেন?
–তুমি যদি পাড়ায় থাকতে বলতে তাহলে শুভদের মতো সবাই তোমাকে বলতো রতির লাভার।
–লাভার না বললেও অনেকে তোমাকে আমাকে জড়িয়ে আলোচনা করতো।

দুপুরের দিকে মণ্ডপ ফাকা হয়ে গেলেও বিকেল হতে আবার লোক জমতে থাকে।রাত যত বাড়ে আলোকসজ্জা তত স্পষ্ট হয়।এক পাশে চেয়ার নিয়ে উমানাথ তার দলবল নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে।মেয়েরা এবার দায়িত্ব নিলেও পরিশ্রম ওদের কমেনি বরং বেড়েছে।ঠাকুর আনা বাজার করা সবই ছেলেরা করেছে।তবে চাদা উঠেছে এবার বেশি।পল্টু বলল,কেন বেশি উঠেছে?
–রতি থাকলে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিত।বঙ্কা কথাটা বলতেই সবাই হো-হো করে হেসে ওঠে।উমানাথ হাসিতে যোগ দেয়না।
রতি সম্পর্কে উমানাথের মধ্যে জমে আছে এক দলা অভিমান।এত করে বলেছিল বিয়েতে আসেনি।উশ্রী বারবার ওর কথা জিজ্ঞেস করছিল।
হাসি থামলে শুভ বলল,যাই বলিস ও কিন্তু আমাদের থেকে আলাদা।
দূরে উশ্রীকে দেখে বঙ্কা হাক দেয়,বৌদি এদিকে।
–আবার ওর পিছনে কেন?উমানাথ বলল।
–আচ্ছা মানা করে দিচ্ছি।বঙ্কা বলল।
–এবার কিন্তু গাড়ে লাথি দেব।উমানাথের কথা শুনে সবাই বঙ্কাকে দেখে।উমানাথ সাধারণত এভাবে কথা বলেনা।
উশ্রী আসতেই হিমেশ একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল,বসুন বৌদি।
বসতে বসতে উশ্রী বলল,আমি বসলে তোমাদের অসুবিধে হবে নাতো?
ইঙ্গিতটা উমানাথের দিকে।উমানাথ জিজ্ঞেস করল,তুমি একা,নণ্টূ কোথায়?
–সাজগোজ করছে,দিদির সঙ্গে আসবে।
–বলুন বৌদি,আমাদের পুজো কেমন লাগছে?শুভ জিজ্ঞেস করল।
–পুজো সবার আমাদের-তোমাদের কি?
–না মানে আগে তো অন্য পাড়ায় পুজো দেখেছেন–।
–পুজো একই,অঞ্চলের মানুষ পরিবেশানুযায়ী এক-একরকম মাত্রা পায়।উশ্রী বলল।
বঙ্কা পাশ থেকে বলে,আমাদের পাড়ার লোকজন কেমন?
–ভাল তবে–?উশ্রী ইতস্তত করে।
–খারাপ কি?বঙ্কা জিজ্ঞেস করে।
–খারাপ নয়।বাড়ী থেকে বেরোচ্ছি এক অদ্ভুত মানুষের সঙ্গে আলাপ হল।
–কুঞ্জবাবু?
–ভদ্রমহিলা নতুন ফ্লাটে এসেছেন,মিনিট দশেক কথা হল তার মধ্যে খালি প্রশ্ন,কি করি কোথায় থাকি কিভাবে বিয়ে হল–।
–ও হো রতির বৌদি,আল্পনা বৌদি।সুদীপ বলল।
–আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব এই রতি কে?এ পাড়ায় থাকে না?
বঙ্কা আড়চোখে উমানাথকে দেখে।উমানাথ বলল, তোমার ওর সঙ্গে কথা বলতে যাবার কি দরকার হল?
–বারে আমি কি কথা বলতে গেছি নাকি?ডাকলে কি শুনব না?
–উনি রতির বৌদি।আগে এ পাড়ায় থাকতেন।রতিও থাকতো।ঠিক আছে?উমানাথ এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল।
–বিয়ের দিন থেকে শুনে আসছি নামটা তাই।মেয়েদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়,কাল বেলাবৌদির সঙ্গে দিদি ওকে নিয়ে কথা বলছিল–।
–মেয়েদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেম হয়নি।বঙ্কা বলল।
–খুব দাম্ভিক?উশ্রী জিজ্ঞেস করে।
উমানাথ বলল,ওর মত বিনয়ী ভদ্র ছেলে হয়না।আলাপ হলে বুঝতে পারতে।
–আসলে কি জানেন বৌদি,মেয়েদের বাইরের সৌন্দর্যের চেয়ে অন্তরে দিকটা বুঝতে চায়।কোন মেয়ে ওর সঙ্গে প্রেম করবে বলুন?
–ইণ্টারেস্টিং।আমার কৌতুহল বাড়িয়ে দিলে।
–এখন আর ওকে পাবেন কোথায়?আগে সারাক্ষণ উমাদার সঙ্গে ঘুরঘুর করতো।এখন বেটা লেখক হয়েছে—।
–এই তোরা আর বিষয় পেলিনা?বঙ্কাকে থামিয়ে দিয়ে উমানাথ বিরক্তি প্রকাশ করে।তুই ব্যাণ্ডপার্টির সঙ্গে কথা বলেছিস?
–এ্যাডভান্স হয়ে গেছে।বঙ্কিম নিজের দায়িত্ব ফেল করেনা।
–চলি ভাই।মনে হচ্ছে আমার যাওয়া উচিত।উশ্রী উঠে পড়ল।বঙ্কা কাছে গিয়ে  ফিসফিসিয়ে বলল,উমাদা রতির উপর খচে আছে।

রাত হয়েছে,আলোক মালায় সেজে উঠেছে কলকাতা। চা টিফিন খেয়ে বেরোবার জন্য প্রস্তুত।খুশবন্ত সালোয়ার কামিজ পরেছে।রত্নাকর লক্ষ্য করে মুন্নি পায়জামার উপর বেল্ট বেধেছে, কোমরে রিভলবার গুজছে।
–আমরা কোথায় যাচ্ছি?রতি জিজ্ঞেস করল।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে রতি হেসে বলল,যেভাবে সাজগোজ করছো মনে হচ্ছে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি।
–বাজে না বকে জীপে গিয়ে বোসো।
আজ অনেকদিন পর বাইরে বের হচ্ছে।রত্নাকরের মন খুশী-খুশী।বাংলোর বাইরে জীপ দাঁড়িয়ে আছে।রত্নাকর ধীর পায়ে এগোতে থাকে।এখানে আর কদিন,ওকে বদলি করে দিয়েছে।আচমকা দুটো লোক কোথা থেকে এসে দু-হাত ধরে টেনে তাকে  একটা গাড়ীতে তোলার চেষ্টা করে।
সম্বিত ফিরতে রত্নাকর বলল,এই-এই তোমরা কারা?একী হচ্ছে–?  মুন্নি–মুন্নি–।
–বোকাচোদা তোর মুন্নির–।হাত ধরে টেনে গাড়ীতে তুলছিল হঠাৎ লোকদুটো হাত ছেড়ে দিয়ে দ্রুত গাড়ীতে উঠে পালিয়ে গেল।কি হল? তাকিয়ে দেখল মুন্নি দাঁড়িয়ে হাতে রিভলবার।রত্নাকর বুঝতে পারে ওকে ফেলে কেন ওরা পালিয়ে গেল?এইরূপে খুশবন্তকে আগে দেখেনি।ড্রাইভারের সিটে বসে বলল,দাঁড়িয়ে কি দেখছো?উঠে এসো।

চলবে —————————