বিচিত্র ফাঁদ পাতা এ ভুবনে (পর্ব-১৪)

বিচিত্র ফাঁদ পাতা ভুবনে/চোদ্দ
লেখক – কামদেব
—————————

মিসেস লামা জল নিয়ে এসে আমার সামনে বসলেন।গভীরভাবে আমার খাওয়া দেখছেন।খাওয়া শেষ করতেই জল এগিয়ে দিলেন।বেশ ক্ষিধে পেয়েছিল।রুমাল দিয়ে মুখ মুছলাম।
–তুমি কি পড়াও?মিসেস লামা জিজ্ঞেস করেন।
–আমার বিষয় psychology.
সুসি ফ্রেশ হয়ে ফিরে এল।মেয়ের চনমনে ভাব দেখে মিসেস লামার মুখে একটা তৃপ্তির ভাব।সুসি আমাকে বলল,হ্যালো গুড বয়,চলো তোমাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।
আমি উঠে পড়লাম।সুসি তর্জনিতে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে মাকে বলে,মম তুমি ড্যাডকে ম্যানেজ করবে,আমার decision final.চলো আনজান।
মিসেস লামা হাসলেন চোখ বন্ধ হয়ে গেল।আমিও ভদ্রতা করে না বুঝে হাসলাম।আমাদের বাড়ীর পরিবেশ সুসিদের বাড়ীর সাজসজ্জা পরিবেশ আলাদা।
কি এমন সিদ্ধান্ত নিল সুসি কিছুই বুঝতে পারি না।সুসির সঙ্গে বেরিয়ে গাড়িতে উঠি। ঘড়িতে সময় আটটার কাছাকাছি।মাকে বলেছি ট্রেন লেট।রাস্তার আলো জ্বলছে,গাড়ি ছুটে চলল।সুসি চুপচাপ শান্ত।সুসিকে এভাবে দেখতে ভাল লাগে না।জিজ্ঞেস করি,কি হল কথা বলছো না কেন?
আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে,গাড়ি চালাবার সময় কথা বলতে নেই।
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে গেল গাড়ি।কিছুক্ষন পর সুসি বলে,জানো আনজান একটা বড় ফায়শলা নিলাম।দিল বহুৎ খুশ আছি।
সিগন্যাল নীল হতে আবার চলতে শুরু করি।কি ফয়শলা খুলে বলল না।
আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না যা ইচ্ছে করছে আমিও ক্যালানের মত ওর ইচ্ছেতে সায় দিয়ে যাচ্ছি।হঠাৎ গাড়ীটা দাঁড়িয়ে পড়ল।আবার কি হল?জিজ্ঞেস করিলাম,কি ব্যাপার থামলে কেন?
–একটা অড সাউণ্ড শুনতে পাচ্ছো না?
দরজা খুলে নেমে গিয়ে বনেট খুলে কিসব ঘাটাঘাটি করতে থাকে।একটা বাঙালী ছেলের সঙ্গে মেয়ের যত পার্থক্য গুর্খাদের তত নয়।কখনো মেয়েরা ছেলেকেও ছাপিয়ে যায়।গাড়ী চালাচ্ছে আবার নেমে গিয়ে বনেট খুলে মেরামত করছে বাঙালী মেয়েদের কাছে প্রত্যাশিত নয়।জানলা দিয়ে মুখ বের করে বললাম,আমি কি বাসে চলে যাবো?
চোখ পাকিয়ে সুসি বলল,চুপচাপ বৈঠে রহো।
অফিস হতে অনেক্ষন ফিরেছে পরিবানু।আজ রাস্তার কাজ দেখতে গেছিল,অনেক দূর কলকাতা থেকে। সেখানেই চান্দুর সঙ্গে দেখা।বেশ ডাগর মেয়েটা, মাথায় ইট বইছিল। নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে যায়।বাচ্চু কলেজ গেলে বাড়ি ফাকা। মেয়েটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,তোমার নাম কি?
–মুই চান্দুমনি সরেন বটে।
–আমার বাড়িতে কাজ করবে?
মেয়েটি অবাক হয়ে ইঞ্জিনিয়ার রায় বাবুর দিকে দেখে।
–যা হাতমুখ ধুয়ে আয়।ম্যাডামের সঙ্গে যাবি।তোর ভাগ্য খুলে গেল রে।হে-হে করে হেসে বলেন রায়বাবু। চান্দুও হাসতে থাকে।
সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে,একজন লোক অন্তত থাকবে বাড়িতে।পরিবানুর মাথায় নানা চিন্তার মিছিল।বাচ্চু ফেরেনি এখনো। রোজ কি দেরি হবে এরকম?সুসি নাকি কলকাতায় এসেছে অফিসের ম্যানেজার জানালেন।শ্রাদ্ধের কাজে আসেনি সুসি। বাচ্চুর চাহিদায় কোন ঘাটতি থাকছে না তো? পরিবানু কি ভাবছে কেবল নিজের কথা? মনটা ভাল নেই,চা করে খেতে ইচ্ছে হল না।বাচ্চুর জন্য চিন্তা হচ্ছে।
কলিং বেল বাজছে,বাচ্চু এল বুঝি? চান্দুকে দরজা খুলতে বলে।দরজা খুলে ফিরে এসে বলে, একটা মেয়ে এসছে বটে।
কপালে ভাজ পড়ে,মেয়ে? নীচে নেমে বসার ঘরে ঢুকে অবাক,সোফায় বসে আছে সুরভি লামা।বাইরে গাড়ি দাড়িয়ে,কার গাড়ি?পরিবানুকে দেখে উঠে দাঁড়ায় সুরভি। বসতে বলে নিজেও বসে।
–আমার ড্যাড দার্জিলিং গেছে,গ্রাণ্ড-মার শরীর খারাপ।সে জন্য কাল আসতে পারিনি।আজ এসেছি।
–কাজের খবর কি?
–ব্রিক ওয়ার্ক শুরু করেছি।আপনি আসুন খুশি হবেন।
–কাজ দু-রকম হয়,একটা অন্যকে খুশি করার জন্য আরেকটা নিজের খুশির জন্য।কোন ক্ষেত্রে প্রথমটা আবার কোন ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টার জন্য যত্নবান হওয়া উচিৎ।এ ক্ষেত্রে আমি বলব, কাজটা তোমার কাছে কতটা সন্তোষজনক।
মিস লামা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।ম্যাডাম লেখাপড়া বেশি জানে না জানা ছিল।কিন্তু যেভাবে উনি বললেন তাতে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না।
–আমি কি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি?পরিবানু জিজ্ঞেস করে।
–ইয়েস ম্যাম।আমি প্রানপন করছি ম্যাম।
আবার কলিং বেল বেজে উঠল।চান্দু দরজা খুলতে গেল।
পরিবানু বলে,এখন আবার কে এল?
–আনজান হতে পারে।মিস লামা বলে।পরিবানুর কপালে ভাজ পড়ে।
মিস লামা এসে অবধি আনজানের খোজ নেয় নি।ঘরে আছে না বাইরে আছে জানে না।তা হলে?
আমি ঘরে ঢুকলাম, মিস লামাকে দেখেও না-দেখার ভান করে উপরে চলে এলাম।
গলা চড়িয়ে বলে পরিবানু, চেঞ্জ করে নীচে এস,চা করছি।মিস লামাকে বলে,একটু বসো,আমি আসছি।
মিস সুরভি রুমাল বের করে ঘাম মোছে।ম্যামের কথা ভাবছে,অদ্ভুত পারশোন্যালিটি, ধীরে কথা বলেন।যতটুকু দরকার ততটুকু বেশিও না কম না।ছেলেকে কি ভাবে গ্রিফ করে রেখেছেন বুঝতে পারে।আনজান বড় সরল।
হাসতে হাসতে ঢুকলাম,সুসি একা বসে।
–তোমার এত দেরি হল?
–কোথায় নামিয়ে দিয়েছো,এতটা পথ হাটতে হাটতে আসছি,দেরি হবে না?
আমার হাতটা নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরে বলে,দেখ কেমন ঢিপ ঢিপ করছে।আমি ওর স্তনে মৃদু চাপ দিই।সুসি আমার গলা জড়িয়ে ধারে চুমু খায়।চান্দু চা নিয়ে ঢোকে পিছনে মা।দ্রুত সরে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে সুসি।মা সবাইকে চা এগিয়ে দিয়ে চান্দুকে ট্রে নিয়ে যেতে বলে।এককাপ চা সহ চান্দু ট্রে নিয়ে চলে যায়।কি জানি চান্দু সুসির কীর্তি দেখেছে কিনা?

চলবে ———-